লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন-এই মাপকাঠির বিচারে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে’ ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের ১৪২টি দেশে নারীর পরিস্থিতি নিয়ে করা এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৬৮তম, যেখানে গত বছর ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৭৫ নম্বরে।

এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তান রয়েছে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে।

জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম মঙ্গলবার ‘বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৪’ প্রকাশ করে।

সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতির পাশাপাশি স্কোরেও অগ্রগতি হয়েছে। গত বছর যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ছিল শূন্য দশমিক ৬৮৫, এবার তা বেড়ে শূন্য দশমিক ৬৯৭ হয়েছে।

পৃথকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৪৭৭; শিক্ষায় অংশগ্রহণে অবস্থান ১১১তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৯৪০; স্বাস্থ্যে অবস্থান ১২২ তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৯৬৬; আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অবস্থান দশম, স্কোর শূন্য দশমিক ৪০৬।

এবার শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণে অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। গত বছর ১৩৬টি দেশের মধ্যে ১১৫তম অবস্থানে থাকলেও এবার তা এগিয়ে ১১১তম অবস্থানে এসেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় ধাপের শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে ১১৮তম অবস্থানে।

এগিয়ে স্বাস্থ্য সেবার দিক দিয়েও গত বছরের তুলনায় সূচকে অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ। স্কোরের দিক থেকেও হয়েছে অগ্রগতি।

তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিতে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১২৭তম অবস্থান এবং রাজনীতিতে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে দশম অবস্থানে। অবশ্য স্কোরের দিক থেকে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণে অবনমন ঘটলেও বেড়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ।

২০০৭ সালে বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে ১০০তম, ২০০৮ সালে ১৩০টি দেশের মধ্যে ৯০তম, ২০০৯ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৯৩তম, ২০১০ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৮২তম, ২০১১ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৬৯তম, ২০১২ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৮৬তম, ২০১৩ সালে ১৩৬টি দেশের মধ্যে ৭৫তম অবস্থানে থাকে বাংলাদেশ।

এ বছর মিলিয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো সূচকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। এরপর সুইডেন (চতুর্থ), ডেনমার্ক (পঞ্চম), নিকারাগুয়া (ষষ্ঠ), রুয়ান্ডা (সপ্তম), আয়ারল্যান্ড (অষ্টম), ফিলিপাইনস (নবম) ও বেলজিয়াম (দশম) রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০১ থেকে পিছিয়ে ১১৪, শ্রীলঙ্কা ৫৫ থেকে পিছিয়ে ৭৯, ভুটান ৯৩ থেকে পিছিয়ে ১২০তম, মালদ্বীপ ৯৭ থেকে পিছিয়ে ১০৫তম এবং পাকিস্তান ১৩৫ থেকে পিছিয়ে ১৪১তম অবস্থানে রয়েছে।

তবে উন্নতি রয়েছে নেপালের- গত বছরের সূচকে ১২১তম অবস্থানে থাকলেও এবার দেশটি এসেছে ১১২তম অবস্থানে।

সূচকে অবস্থানের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের পাশাপাশি চীন (৮৭), জাপান (১০৪), কোরিয়া (১১৭), রাশিয়া (৭৫), ব্রাজিল (৭১), ইন্দোনেশিয়া (৯৭) ও ইতালির (৬৯) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

এবারের সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইয়েমেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্বের ১১১টি দেশের গত নয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতায় সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।

এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ২০০৬ সালে যেখানে ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ৫৬ জন নারী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত সেখানে বর্তমানে ৬০ জন নারী এ সুযোগ পাচ্ছে।
নারী-পুরুষের এ ব্যবধান সবচেয়ে কম স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে; ৩৫টি দেশ বৈষম্য সম্পূর্ণ লোপ করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১০০ পুরুষের বিপরীতে ৯৬ জন নারী স্বাস্থ্য সেবার আওতায় এসেছে।

এরপর অগ্রগতি রয়েছে শিক্ষায়; ২৫টি দেশ এ ক্ষেত্রে বৈষম্য পুরোপুরি বিলোপ করেছে। বিশ্বজুড়ে ১১০ ছেলের বিপরীতে ৯৪টি মেয়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।

-বিডিনিউজ২৪

Leave a comment