নারীর ক্ষমতায়নে আপোষহীন অবস্থান

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর, শেখ হাসিনার সরকার নারী উন্নয়নের জন্য নানাবিধ কর্মসূচী ও প্রকল্প হাতে নেয়া শুরু করেছে। নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন সরকারের পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরে। বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫), যেখানে জাতীয় মাঝারি পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সাল (ভিশন ২০২১ নামেও পরিচিত) নাগাদ একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ, নারীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করাকে নারীর ক্ষমতায়নের প্রধানতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে।

বর্তমান সরকার সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ২০১৫ অর্জনের নিমিত্তে, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন সেই সাথে নারীর প্রতি সবরকমের বৈষম্য দূরীকরণের নিয়মপত্র (CEDAW) এবং বেইজিং প্লাটফরম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জাতীয় পর্যায়ে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এমডিজি-৩ যথার্থভাবেই অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এই ইতিবাচক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে মেয়ে ছাত্রীদের জন্য সরকারের বিশেষ দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে, যেমন বৃত্তিপ্রদান এবং গ্রামাঞ্চলে ছাত্রীদের শিক্ষাখরচ অব্যাহতি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের বৃত্তিদানের মাধ্যমে। আর তাই ইউএনডিপিও মন্তব্য করেছে, “বাংলাদেশ লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।”

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবেই, নারীদের মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমান এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো এবং ক্ষমতায়নের বিভিন্ন অন্তরায়সমূহ দূর করার মাধ্যমে, নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। বিশ্ব লৈঙ্গিক বৈসাদৃশ্য রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে ৮ম অবস্থানে আছে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে, যা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের নারী-বান্ধব নীতিসমূহের করণে। বাংলাদেশ লৈঙ্গিক বৈষম্য সূচকে (জিআইআই), একটি বহিঅংশে সমন্বিত সূচক যাতে মানব উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষতির পরিমাপ করে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এই লৈঙ্গিক বৈষম্য সূচকের ১১১তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১২৩তম এবং ভারতের অবস্থান ১৩৩তম।

অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগ

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সম্ভব করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদেরকে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষিত করা, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র ও মধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে। বিবিধ ধরনের ভাতা প্রদানের মাধ্যমে বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা জাল প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেমন দু:স্থ নারী ভাতা, মাতৃকালীন এবং দুগ্ধদায়ী মায়ের জন্য ভাতা, অক্ষম মায়ের ভাতা, তালাকপ্রাপ্তা ভাতা ইত্যাদি। অরক্ষিত গ্রুপ পোষণ (ভিজিএফ) দেয়া হয় অরক্ষিত অতিদরিদ্র নারীদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য, জামানতদারসহ ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয় মাত্র ৫% সেবামূল্যের বিনিময়ে। নারী উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র উদ্যোগ তহবিলের ১০% এবং বাণিজ্যিক খাতের ১০% পেযে থাকে। বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি নারী কেবল তৈরি পোষাক কারখানায় তথা গার্মেন্টসে কাজ করে। বাংলাদেশের নারী শ্রমশক্তি ২০১০ সালের ২৪% থেকে উন্নীত হয়ে ২০১৩তে এসে ৩৬% হয়েছে। গত বছরের মতোই, সাম্প্রতিক ২০১৪-১৫ বাজেটেও ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য লিঙ্গ সংবেদী বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটিতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ বিশেষভাবে নারী উন্নয়নের জন্য ধরা হয়েছে, যা এই খাত ও মন্ত্রণালয়েরগুলোর বরাদ্ধের উদ্বৃত্ত।

কৃষিউৎপাদনে নারীর অংশগ্রহণের সুবিধা দিতে কৃষি-সংক্রান্ত প্রযুক্তি এবং ঋণ দেয়া হয় কৃষিজাত প্রক্রিয়াকরণ, গার্হস্থ্য বাগান, নার্সারি, মৌ-চাষ এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য। প্রান্তিক এবং ভুমিহীন চাষীদের, যাদের ৫০%ই নারী, সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ‘একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পে’ গ্রামের দরিদ্র নারীদের আরো বেশি অংশগ্রহণ একটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি গৃহে।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে, বেশ কিছু সংখ্যক উদ্দীপনা দেয়া হয়ে থাকে। ২০১০ থেকে ২০১৩তে, ব্যাংক এবং ব্যাংক ব্যতীত অন্যান্য অার্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী উদ্যোক্তাদেরকে ৬৭০কোটি টাকা দিয়েছে নিজেদের উৎস থেকে। ২০১০ সালে, ১৩,৮৩১ নারী উদ্যোক্ত ১৮০কোটি টাকা পেয়েছে; ২০১১সালে, ১৬,৬৯৬ নারী উদ্যোক্তা পেয়েছে ২০০কোটি টাকা এবং ২০১২ সালে, ১৭,৩৬২ নারী উদ্যোক্তা পেয়েছে ২২০ কোটি এসএমই ঋণ। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ব্যয়ের সংখ্যা ও পরিমাণ উভয়ই বেড়েছে।

নারী উদ্যোক্তাগণ এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে পুন:অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। নারীরা বিশেষ সুবিধাযুক্ত ১০% সুদে ঋণ পাচ্ছে। পুন:অর্থায়ন তহবিলের ১৫% বরাদ্ধ রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য। নারীরা ২৫লাখ পর্যন্ত এসএমই ঋণ সুবিধা পাচ্ছে জামানতদার ছাড়া, কেবলই ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে। তদুপরি, সকল ব্যাংক এবং ব্যাংক ব্যতীত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেডিকেটেড ডেস্ক খুলেছে, যেখানে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য ও সেবা দিয়ে থাকে।

মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্য

মায়েদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে, বর্তমান সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটিকে চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাসের করেছে। বাংলাদেশ মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার (MMR) ব্যাপক সাফল্যের সাথে কমিয়ে এনেছে। এই মৃত্যুহার গত দু্‌ই দশকে ৬৬%এরও বেশি কমেছে এবং তা প্রতি বছর এখন ৫.৫% মতো নেমে এসেছে, যার ফলে বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) এর ইপ্সিত প্রতি ১০০,০০০ টি জন্মগ্রহণের মধ্যে ১৪৩টি মৃত্যুর লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছাতে পারবে ২০১৫এর মধ্যে।

জাতিসংঘের কিছু সংস্থার ২০১৩সালে চালানো জরীপে, বাংলাদেশের মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার প্রতি ১০০,০০০টি জীবিত জন্মগ্রহণের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে ১৭০টি। বর্তমান সরকার এই মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহারকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি ১০০,০০০টি জীবিত জন্মগ্রহণের বিপরীতে ৬৩টিতে নামিয়ে আনতে চায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে গ্রামীন, প্রান্তিক ও দুস্থ্য নারীদের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারী বান্ধব মডেল হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে জেলায় জেলায়। মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের আওতায় একটি ভাউচার প্যাকেজ দেয়া হয় যার অধীনে তিনটি প্রসব পূর্ব চেকআপ, দক্ষ দাইয়ের অধীনে নিরাপদ জন্মদান, একটি প্রসব পরবর্তী চেকআপ এবং যাতায়াত খরচ বাহিত হয়।

শিক্ষা

শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নের জন্য মেয়েদের শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা ৬ থেকে ১০ বছরের সকল শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত সকল শিশু বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল মেয়েদের সরকারী বিদ্যায়তনগুলোতে শিক্ষা খরচ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে এবং ঝরে পড়ার হার কমাতে, বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের শিক্ষার জন্য এই প্ররোচক কৌশলের ফলে লৈঙ্গিক সমতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের ভর্তির হার এখন ৫১% এবং মাধ্যমিকে তা ৫৩%, যেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৪৭%, মাত্র কিছু বছর পেছনে ফিরে দেখা যাবে যখন ছেলেদের ছিল ৬৫% এবং মেয়েদের মাত্র ৩৫%।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯এ ক্ষমতায় আসার পরে প্রধান যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা হলো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ যেখানে নারীদের সম্পদের সমান অধিকার এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল নারীর অধিকার এই নীতির ফলে আরো উচ্চকিত হয়েছে। এই নীতি রাষ্ট্রকে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় তার অধিকারের প্রতি তার জমিতে, অর্জিত সম্পত্তিতে, স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, প্রশিক্ষণে, তথ্যে, উত্তরাধিকারে, ঋণে, প্রযুক্তিতে এবং উপার্জনের সুযোগে, আর এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দিয়ে থাকে। আগস্ট ২০১৩তে, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে এই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের জন্য। আর এটাও বিশেষভাবে স্মরণীয় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সকল নারীর সমতা বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্ট এই ২০১১ এর নীতির অঙ্গীকার থেকে কখনওই পিছুপা হয়নি, যদিও তারা প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীনও হয়েছে, যা কখনো চরম সহিংস এবং সন্ত্রাসমূলক প্রতিরোধ ছিল ধর্মীয় চরমপন্থী দলগুলোর থেকে; যেমন, জামাত-ই-ইসলাম বা হেফাজত-ই-ইসলামি।

নারীর প্রতি সহিংসতা দমন

ডিসেম্বর ২০১০, সংসদে পারিবারিক সহিংসতা (দমন এবং নিরাপত্তা) আইন ২০১০ পাশ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতাকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আইন নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের নিয়মপত্র (CEDAW) এবং সংবিধানের ২৮ তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করে, যা নারী ও শিশুর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে নিশ্চয়তা দেয়। আইনটিকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে, সরকার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা) বিধি ২০১৩ প্রণয়ন করেছে।

বর্তমান সরকার প্রণীত নারীর প্রতি সহিংসতা দমনের জন্য অন্যান্য আইনের মধ্যে আছে মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি, ৭টি বিভাগে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারগুলো মেডিক্যাল চিকিৎসা, আইনি সহায়তা, পলিসি সহায়তা এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। লিঙ্গ সম্পর্কিত অপরাধ যেমন ধর্ষণের কার্যকর তদন্তের জন্য কিছু জাতীয় হাসপাতালে ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব এবং ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

আক্রান্ত নারীদের জন্য আরো সহজ করতে দুস্থ সহায়তা কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হচ্ছে প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার নারী অফিসারদের দ্বারা। আন্তর্জাতিক আইন এবং কনভেনশনের উপর জাজ এবং আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা নারীর প্রতি সহিংসতা এবং লিঙ্গ সংবেদনশীতা সম্পর্কিত প্রচলিত আন্তর্জাতিক কাঠামোগুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকেন। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় (MoWCA), নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের সমন্বয় সাধনের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচালনা করে থাকে এবং সহিংসতায় আক্রান্তদেরকে যথাযথ প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে। এই মন্ত্রণালয় এখন একটি হেল্পলাইন (১০৯২১) পরিচালনা করে থাকে যা সহিংসতায় আক্রান্তদেরকে আইনি, মেডিক্যাল, পুনর্বাসন এবং পরামর্শ সহায়তা দিয়ে থাকে।

অকাল এবং বাল্য বিবাহের সমাপ্তি

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য জাতীয়ভাবে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রচারিত একটি ক্যাম্পেইন হচ্ছে, “মেয়ে, কনে নয়”। বাংলাদেশে, গত দু’দশকে বাল্যবিবাহ বেশ কমে এসেছে। নারীর বিবাহযোগ্য বয়স হচ্ছে ১৮, কিন্তু ২০ বছর আগে দেশের ৫১% মেয়ের বিয়ে হয়ে যেতো ১৫ বয়সের মধ্যেই। বর্তমানে এই হার কমে ১৭% হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সচেতনতার কারণে অপরিণত কৌশোরে বিয়ের দেবার প্রবণতা কমে আসছে ক্রমশই। বাল্যবিবাহ আইন ১৯২৯ এর সংশোধন চলছে এবং শিশুদের কল্যান নিশ্চিত করার জন্য প্রথমবারের মতো শিশু আইনও প্রণীত হচ্ছে। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ এর মধ্য দেশ থেকে বাল্যবিবাহ সম্পর্ণ নির্মূলের অঙ্গীকার করেছেন গত ২২শে জুলাইতে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে।

রাজনীতি, প্রশাসন এবং নিরাপত্তায় নারী

নারীর ক্ষমতায়নকে বাড়ানোর জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা আরো ৫টি বাড়িয়ে, ৫০টি করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচিত নারী সাংসদের সংখ্যাও (মোট আসনের ২০%) নিশ্চিতভাবে বাড়ছে। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগবৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল, উপজেলা পরিষদ এবং মিউনিসিপ্যালিটিগুলোতেও সংরক্ষিত আসন মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো হয়েছে এবং সেসব সিটে নারীরা সরাসরিও নির্বাচিত হতে পারে। স্থানীয় সরকারের শেষ পর্যায়ে ১২,০০০ এর বেশি নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পীকার এবং সংসদের উপনেতা সবাই নারী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় – সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ কমিশনার, পুলিশের উচ্চ পর্যায়, সশস্ত্রবাহিনী, ইউএন শান্তিকর্মী ইত্যাদিতে নারীর সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই নারীর ক্ষমতায়নের উন্নতি নির্দেশ করে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রশাসনের সব পর্যায়ে নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা রাখার কারণে।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতেও লৈঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গীটি সমন্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানগুলোতে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি নারী পুলিশ পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষাবাহিনী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা, স্থানীয় নারী পুলিশ অফিসারদেরকে উপদেশ ও পরামর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রে নারীর ক্ষমতায়ন সেই সাথে সামাজিক সংযোগ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশি ১৯০ জন নারী অফিসার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনের কাজে নিয়োজিত আছেন।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

জাতিসংঘের সাধারণ সভার জন্য সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য এবং অসমতা উভয়কেই সংকটাপন্ন গুরুত্বের সাথে দেখিয়েছে এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়নের বিষয়সূচিতে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রধান গুরুত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রিপোর্টে প্রদর্শিত লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন যেখানে চারটি প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে: নারী এবং মেয়েদের প্রতি সহিংসতা নির্মূল, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীদারিত্ব যা গৃহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং বাল্যবিবাহ রোধ। যদি সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্যগুলোকে কোনো সূচক হিসেবে দেখা যায়, তবে নিরাপদভাবেই আশাবাদী হওয়া যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ পরবর্তী নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলোও অর্জনে সফল হবে। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের বলিষ্ঠ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতৃত্বে, বাংলাদেশের নারীর সামনে এমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই যা তাদের প্রতিহত করতে পারে।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থনৈতিক সাফল্যের পাঁচ বছর

এটা সর্বজন স্বীকৃত যে বাংলাদেশ সামাজিক অগ্রগতি এবং মানব উন্নয়নের সূচকে ব্যাপক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সাফল্যের ধারাতেই আছে।

বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৩ বলছে: “কিছু দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে বেশ ভালো করেছে, এবং অন্যরা ভালো করেছে অর্থনৈতিক সূচকে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই ক্ষুদ্রতর গ্রুপে পড়ে যারা উভয়ক্ষেত্রেই বেশ ভালো করেছে”। এই বিশেষ রিপোর্টে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, বিশেষ করে যখন থেকে বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দেশের অর্থনীতি চালিকাশক্তি যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক স্বপ্নদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে এবং তাঁর যোগ্যতম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের হাতে।

দূরদৃষ্টি এবং নীতিমালা

বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক লক্ষ্য ছিল ভিশন ২০২১ (যার স্বপ্ন হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা) এবং ভিশন ২০৪১(বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা) এর বাস্তবায়ন। সেই উদ্দেশ্যে সরকার একটি পারস্পেক্টিভ প্ল্যান (২০১০-২০২১) এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক প্ল্যান (২০১০-২০১৫) প্রণয়ন করে যার লক্ষ্য হচ্ছে প্রদর্শিত সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি চালিত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের সার্বিক উন্নয়নকল্পে এমন দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ নজীরবিহীন। এরপর থেকে প্রতি বছরের বাজেটগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ঘটে চলেছে সেই সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই।

বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অব্যাহত ধারা

আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, সার্বিক আভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) তখন স্থিত হয়েছিল ৫.৭৪ শতাংশে। GDPতার পর থেকে গত পাঁচ বছরে, দেশের প্রবৃদ্ধি গড়ে ছিল ৬.২%, ২০১১ সালে এই প্রবৃদ্ধির পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬.৭১ শতাংশে। জিডিপির পরিমাণও গত পাঁচ বছরে বেড়েছে, ২০০৯ সালে যা ছিল ৮৯.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৪ সাল নাগাদ তার পরিমাণ হয়েছে ১২৯.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ গোল্ডম্যান স্যাকসএর নেক্সট ইলেভেন (N-11), জেপি মরগ্যানের ফ্রন্টিয়ার ফাইভে এবং গ্লোবাল গ্রোথ জেনারেটরস (3G) তে অন্তর্ভূক্তি পাচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের কারণে, জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয়াদির পরিচালক ড. রব ভস ২০১২ সালে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শৃঙ্খলার ‘উদীয়মান তারা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

উঠতি মাথাপিছু আয় এবং জীবনমানের সমুন্নত

নতুন পেস্কেলের সূচনা, সরকারী কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা, আয় সৃষ্টিকারি কর্মকাণ্ড, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের বিস্তার এবং অন্যান্য মধ্যবর্তীতা ইত্যাদি উদ্যোগের ফলে জনগণের প্রকৃত আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এর সূত্রে ২০১৪ এর প্রথমার্ধে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মার্কিন ডলার। যা গত ২০১২/১৩ অর্থবছরে ছিল ১,০৪৪ মার্কিন ডলার আর তা ২০০৫/০৬ তে ছিল মাত্র ৯২৩ মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার এই মাথা পিছু আয় ২০২১ নাগাদ ২০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে ইচ্ছুক।

সমৃদ্ধ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

Foreign Exchangeবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল গতিতে এগিয়ে চলেছে। গত তিনটি অর্থ-বছরে রিজার্ভের পরিমাণ ২০১২ সালে জুন মাসে ১৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয় ২০১৩ সালের জুনে, যা ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায় ২০১৪ সালের জুনে যা কিনা ৩৭% এর বেশি বৃদ্ধি এবং এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে চলেছে মূলত রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ফলে। এই সূচক স্পষ্টভাবেই নির্দেশ করে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতে কতটা বলিষ্ঠতা অর্জন করেছে।

রেমিট্যান্স আয়ের সুস্থিত বৃদ্ধি

বিদেশে প্রবাসীদের থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৭ম স্থানে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে, বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটা স্থির গতি পেয়েছে এবং এর বৃদ্ধিও বেশ লক্ষণীয়। ২০০৯/১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আয় করে ১০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০/১১ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ১১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০১১/১২ অর্থবছরে ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১২/১৩ ও ২০১৩/১৪ অর্থবছরের প্রতিটিতেই ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। রেমিট্যান্সের এই বৃদ্ধির কারণগুলোর অন্যতম হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বেশি বেশি জনশক্তি বিশ্বের নতুন নতুন দেশে পাঠানো।

Remittances

বর্ধিত রপ্তানি আয়

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে ২০১৩/১৪ অর্থবছরের হিসেব মতে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য মতে, Exports বাংলাদেশ তার বিভিন্ন পন্য বিদেশে বিক্রি করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (অর্থবছর শেষ হয়েছে জুন ১৩, ২০১৪) আয় করেছে ৩০.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারণ রপ্তানী আয় আওয়ামী লীগের অধীনে প্রতি অর্থবছরেই নিয়মিত হারে বেড়ে চলেছে, রপ্তানীকারকদেরও বিভিন্ন অনুপ্রাণনা দেয়া হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থ বছরে রপ্তানির আয় ছিল ২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১১/১২ অর্থবছরে হয়েছিল ২২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১২/১৩ অর্থবছরে ২৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

বর্ধনশীল সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ

জাতিসংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UNCTAD) এর প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ গত ছয় বছরেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে এসেছে। আগের বছরের চাইতে ২০১৩/১৪ অর্থবছরে এফডিআই ২৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর ২০১২/১৩ অর্থবছরে আগত এফডিআইয়ের পরিমাণ আগের বছরের চাইতে ছিল ১৩.৭৫% বেশি ১.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ বান্ধব গন্তব্য হিসেবে ভারতেই পরেই দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। এই সুস্থিত ধারাবাহিক বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারিদের আস্থারই প্রতিফলন, যা নির্দেশ করে দেশের কার্যকারিতা এবং সরকারের সামর্থ্যও। অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যাপক হারে বেড়েছে, বিশেষত উৎপাদনশিল্পে এবং সেবাখাতসমূহে যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং অবকাঠামো বিনির্মাণে। বাংলাদেশ এখন প্রধানতম আইটি আউটসোর্সিংয়ের গন্তব্যও।

FDIসর্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: গরীব সহায়ক নীতিমালার পরিকল্পনা

সরকার সম্প্রতি ৪.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি স্কিম হাতে নিয়েছে অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলোকে গরীব সহায়ক করতে। যার নাম হচ্ছে সাপোর্ট টু ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাস্টেইনেবল প্ল্যানিং (SSIP) প্রকল্প, যে স্কিমটি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অর্থায়নকৃত, বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে জুন ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ এর মধ্যে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত এই প্রকল্পের অভীষ্ট হচ্ছে, পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন (GED), অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর ক্ষমতা এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি। এই প্রকল্প সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নথিপত্র প্রস্তুতিতেও কারিগরি সহায়তা দেবে। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর আওয়তায় সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনেও এটি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ এর মধ্যে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন করেছে ৫.৯ শতাংশ, যা অতিশয় দরিদ্রের ক্ষেত্রে ৪.২ শতাংশ।

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে সন্তুষ্ট

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে প্রকাশ, ৭১ শতাংশ বাংলাদেশি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট, যা প্রকারান্তরে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকারের অর্তনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থারই প্রকাশ। এটি দেশবাসীর আশাবাদীতাই নির্দেশ করে, যদিও বৈশ্বিক প্রবনতায় এই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে অন্যান্য অনেক দেশের মানুষ তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয়, ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশি আশা করছে আগামী ১২ মাস সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরো উন্নতি সাধিত হবে।

বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষে: বাণিজ্যিক আস্থায়

এইচএসবিসি ব্যাংকের সর্বশেষ বাণিজ্যিক আস্থা সূচকে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যিক আস্থায় স্পষ্টভাবে এগিয়েছে, গত ৬ মাসে ৩৬টি পয়েন্টে, যা বিশ্বের এই ধারার ২৩টি শীর্ষ দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। এই সূচকে প্রকাশ বাংলাদেশ ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ১৪১ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ছিল ১০৩ পয়েন্ট। বাংলাদেশ যে দেশগুলোকে এই প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, তুরস্ক, চীন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, কানাডা, মালেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জার্মানী, হংকং, অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্স। এই রিপোর্টে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল রপ্তানীও একটি বলিষ্ঠ গতি পেতে যাচ্ছে, ২০১০ সালের ২.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে যা ৩.৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা সাম্প্রতিকতম উদ্যোগগুলোর ফলশ্রুতিতে এর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার মান আরো উন্নত হয়েছে। এতে আরো পূর্বাভাস করা হয়েছে বর্তমান দশকের বাকি বছরগুলোতেও বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল হবে এর বিনিয়োগ, বিশেষত অবকাঠামোগত দিকে।

আর্থিক ব্যবস্থাপনার সূচকও আশাপ্রদ

গত ৫ বছরে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মূল জিডিপির ১০.৭ শতাংশ থেকে ১৩.৩ শতাংশে। সরকার আগামী ৫ বছরে দেশের আভ্যন্তরীণ সম্পদ সংহতি ১৭ শতাংম বাড়াবার লক্ষ্য নিয়েছে। একই সময়ে, জনগণের ব্যয়ের মাত্রা মূল জিডিপির ১৫.৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৩ শতাংশ। সরকার এই বৃদ্ধিকে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মূল জিডিপির ২২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। সরকার সাফল্যের সাথে দেশের মুদ্রাস্ফীতিরও রাশ টেনে ধরতে সক্ষম হয়েছে। জুন ২০১৩/১৩ তে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮ শতাংশ, যা ২০১৩/১৪ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৭.৪ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সরকার এই হারকে এবছরের শেষ নাগাদ ৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে আশাবাদী।

২০১৪/১৫ অর্থবছরে বৃদ্ধির লক্ষমাত্রা এবং তা অর্জনের পরিকল্পনা

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বার্ষিক বাজেট বক্তৃতায়, ২০১৪/১৫ অর্থবছরে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ২০২১ সাল নাগাদ তা ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রূপরেখা ব্যক্ত করেছেন। এটি উচ্চাভিলাষী শোনালেও, সরকার এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার নীতি ও কৌশলসমূহের রূপরেখা দিয়েছে, যেমন: ক) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বন্দর উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রয়োগ; খ) সার্বিক জাতীয় বৃদ্ধিতে শিল্পখাতে ২৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণ; গ) পাবলিক-পাবলিক পার্টনারশীপ (PPP) এর দ্বারা অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাইভেট বিনিয়োগ বৃদ্ধি; ঘ) বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ব্যয় কমিয়ে আনা; ঙ) বড় বড় প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বিশেষ বরাদ্দ; চ) আইটি, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া, তৈরি পোশাক, ঔষধশিল্পে উদ্দীপনা প্যাকেজের মাধ্যমে রপ্তানী আরো গতিশীল করা; ছ) কৃষিখাতের জন্য ভর্তুকি প্রদান; জ) কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন; ঝ) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন; ঞ) জলাভূমি ও উপকূলীয় বেষ্টনীর উন্নয়ন।

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এই সব অর্জন সম্ভব হয়েছে যখন পুরো ২০১৩ সাল জুড়ে বিএনপি এবং তাদের মৌলবাদি তাবেদার জামাত-ই-ইসলামি দেশব্যাপী ব্যাপক তাণ্ডব ও নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছিল তা সত্ত্বেও। অর্থনীতির এই সকল সূচকের বলিষ্ঠতা, দেশবাসীর সহনশীলতা এবং সরকারের দৃঢ়সংকল্প নির্দেশ করে, যার ফলস্বরূপ বৈরি পরিস্থিতেও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। যদি বর্তমানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিশ্চিতভাবেই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হবে, অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। বাংলাদেশ, গর্জে উঠছে যার অর্থনীতি।

লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন-এই মাপকাঠির বিচারে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে’ ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের ১৪২টি দেশে নারীর পরিস্থিতি নিয়ে করা এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৬৮তম, যেখানে গত বছর ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৭৫ নম্বরে।

এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তান রয়েছে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে।

জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম মঙ্গলবার ‘বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৪’ প্রকাশ করে।

সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতির পাশাপাশি স্কোরেও অগ্রগতি হয়েছে। গত বছর যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ছিল শূন্য দশমিক ৬৮৫, এবার তা বেড়ে শূন্য দশমিক ৬৯৭ হয়েছে।

পৃথকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৪৭৭; শিক্ষায় অংশগ্রহণে অবস্থান ১১১তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৯৪০; স্বাস্থ্যে অবস্থান ১২২ তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৯৬৬; আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অবস্থান দশম, স্কোর শূন্য দশমিক ৪০৬।

এবার শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণে অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। গত বছর ১৩৬টি দেশের মধ্যে ১১৫তম অবস্থানে থাকলেও এবার তা এগিয়ে ১১১তম অবস্থানে এসেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় ধাপের শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে ১১৮তম অবস্থানে।

এগিয়ে স্বাস্থ্য সেবার দিক দিয়েও গত বছরের তুলনায় সূচকে অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ। স্কোরের দিক থেকেও হয়েছে অগ্রগতি।

তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিতে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১২৭তম অবস্থান এবং রাজনীতিতে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে দশম অবস্থানে। অবশ্য স্কোরের দিক থেকে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণে অবনমন ঘটলেও বেড়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ।

২০০৭ সালে বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে ১০০তম, ২০০৮ সালে ১৩০টি দেশের মধ্যে ৯০তম, ২০০৯ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৯৩তম, ২০১০ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৮২তম, ২০১১ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৬৯তম, ২০১২ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৮৬তম, ২০১৩ সালে ১৩৬টি দেশের মধ্যে ৭৫তম অবস্থানে থাকে বাংলাদেশ।

এ বছর মিলিয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো সূচকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। এরপর সুইডেন (চতুর্থ), ডেনমার্ক (পঞ্চম), নিকারাগুয়া (ষষ্ঠ), রুয়ান্ডা (সপ্তম), আয়ারল্যান্ড (অষ্টম), ফিলিপাইনস (নবম) ও বেলজিয়াম (দশম) রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০১ থেকে পিছিয়ে ১১৪, শ্রীলঙ্কা ৫৫ থেকে পিছিয়ে ৭৯, ভুটান ৯৩ থেকে পিছিয়ে ১২০তম, মালদ্বীপ ৯৭ থেকে পিছিয়ে ১০৫তম এবং পাকিস্তান ১৩৫ থেকে পিছিয়ে ১৪১তম অবস্থানে রয়েছে।

তবে উন্নতি রয়েছে নেপালের- গত বছরের সূচকে ১২১তম অবস্থানে থাকলেও এবার দেশটি এসেছে ১১২তম অবস্থানে।

সূচকে অবস্থানের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের পাশাপাশি চীন (৮৭), জাপান (১০৪), কোরিয়া (১১৭), রাশিয়া (৭৫), ব্রাজিল (৭১), ইন্দোনেশিয়া (৯৭) ও ইতালির (৬৯) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

এবারের সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইয়েমেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্বের ১১১টি দেশের গত নয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতায় সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।

এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ২০০৬ সালে যেখানে ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ৫৬ জন নারী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত সেখানে বর্তমানে ৬০ জন নারী এ সুযোগ পাচ্ছে।
নারী-পুরুষের এ ব্যবধান সবচেয়ে কম স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে; ৩৫টি দেশ বৈষম্য সম্পূর্ণ লোপ করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১০০ পুরুষের বিপরীতে ৯৬ জন নারী স্বাস্থ্য সেবার আওতায় এসেছে।

এরপর অগ্রগতি রয়েছে শিক্ষায়; ২৫টি দেশ এ ক্ষেত্রে বৈষম্য পুরোপুরি বিলোপ করেছে। বিশ্বজুড়ে ১১০ ছেলের বিপরীতে ৯৪টি মেয়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।

-বিডিনিউজ২৪

সরকারের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেনঃ গাল্‌ফ নিউজকে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে এবং তাঁর সরকারের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কারো কারো আশংকা সৃষ্টি হয়েছিলো নির্বাচনের আগের কয়েকটি বিরোধী দলের সৃষ্ট গোলযোগ নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। জনগণ এ ধরনের সন্ত্রাস ও বিশৃংখল পরিস্থিতি মেনে নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরকালে গাল্ফ নিউজের সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) এক্সিকিউটিভ চেয়ারপার্সন এবং অপর এক সংসদ সদস্য আন্তঃপার্লামেন্টারী ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, এটি আমার সরকার ও পার্লামেন্টের প্রতি বিশ্বের সমর্থন প্রমাণ করে।

শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা সম্পর্কে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে দেশের একজ নাগরিক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশ সকলকে মেনে চলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবসময় চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। দিল্লীতে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকেই। তবে এ বিষয়ে আমার নীতি হচ্ছে কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করা।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই গঙ্গার পানি বন্টন ও সীমান্ত সীমানা বিরোধসহ অনেক সমস্যার সমাধান করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি নিউইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খুবই আন্তরিক পরিবেশেষ আমার বৈঠক হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত এলাকায় জনগণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের উন্মুক্ত সীমান্ত হাট রয়েছে। দু’দেশের জনগণ হাটে আসছে। ভারতের ওপর দিয়ে আসা ৫৪টি নদীর পানির হিস্যা নিয়ে পানিবিষয়ক যৌথ কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে এবং আমরা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতা সত্ত্বেও তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরে প্রধানমন্ত্রী কতটা আশাবাদী এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমরা জানি তিনি কি করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য দলগুলো খুবই সহায়ক মনোভাবের। একমাত্র তিনিই সহায়তা মনোভাবের নয়। তবে আমি নিশ্চিত, এক সময় তিনি ঠিকই বুঝতে পারবেন এবং সহযোগিতা করবেন।

প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অঞ্চলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহযোগিতা, যোগাযোগ ও বাণিজ্যের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ব্যবস্থা সম্ভব হবে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য সরবরাহ, আশ্রয়, স্বাস্থ্য সুবিধা, সেনিটেশন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনগণের ক্ষমতায়নের মতো, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের অভ্যন্তরের অথবা বাইরের কোনো শক্তি আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশে শান্তি চাই নাÑ সমগ্র অঞ্চলে শান্তি চাই। অগ্রগতির জন্য শান্তি প্রয়োজন। আমরা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের জন্য কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করার সুযোগ দেবো না।

শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভারত, মায়ানমার ও চীন সফরকালে একই অনুভূতি পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে এখন তারা দ্রুত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠন করছে। বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব রয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শেয়ার করবে এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নতি করবে। এই প্রস্তাবে ভারতের প্রায় সম্মতি রয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর গঠনের একটি ধারণা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক বেইজিং সফরকালে চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। আসিয়ান ও সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান নিজের ও দুটি অর্থনৈতিক ব্লকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা রেল, সড়ক ও বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য, পর্যটন, বিনিয়োগ ও কৌশলগত অংশীদারিত্বে গালফলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই। শিশু শ্রমিক ইস্যু নিয়ে এবং বস্ত্রশিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তিন হাজার পাঁচশ’ রফতানিমুখী কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৬১টি পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে আইন মেনে চলতে না পারায় মাত্র ২৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সরকার সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন, উন্নয়ন অংশীদার, রফতানিকারক,বায়ার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন ও ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কারখানা পরিদর্শনের জন্য ৯৯৩টি পদ সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যেই ২শ’ পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একই সাথে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৭৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ডাকোটা উড়োজাহাজ উপহার দিল ভারত

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যাদুঘরে রাখার জন্য নিদর্শনস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি উড়োজাহাজ উপহার দিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর আনুষ্ঠানিক অনুরোধে সাড়া দিয়ে ডাকোটা মডেলের এই উড়োজাহাজটি উপহার দেয়া হয়েছে, যা দুদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে।

ভারতের পালাম বিমান ঘাঁটিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় অধিনায়ক এয়ার মার্শাল এস এস সোমান সফররত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারির কাছে উড়োজাহাজটি হস্তান্তর করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই উড়োজাহাজটির সঙ্গে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সৈনিক পরিবহনজনিত বেশকিছু ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই উড়োজাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

“মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে এই উড়োজাহাজটি টাঙ্গাইলে ভারতীয় ছত্রীসেনাদের নামানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল।”
এছাড়া বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যাত্রাকালেও এর বিশেষ ভূমিকা ছিল বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

১৯৪৭-৪৮ সালের শ্রীনগর যুদ্ধে সেনা অবতরণের সময় ঐতিহাসিক এই ডাকোটা উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয়েছিল।
এই বিমানটি চালিয়েই উইং কমান্ডার মেহের সিং তিব্বত ও সিন্ধু অববাহিকা এলাকার মধ্যবর্তী লেহ অঞ্চলে সাড়ে ১১ হাজার ফুট উপরে প্রথমবারের মতো অবতরণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং একযোগে কাজ করে যাবে : বারাক ওবামা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নিজেদের অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছতে একযোগে কাজ করে যাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ন’টায়) বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের পরিচয়পত্র গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় বারাক ওবামা নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের’ বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথের একজন ‘পরীক্ষিত, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ওবামা প্রশাসনের চারটি গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ যথা- ‘ফিড দ্য ফিউচার, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং মুসলিম বিশ্বের সাথে এনগেজমেন্ট’এর সবকটিতে বাংলাদেশকে যুক্ত করায় তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশ ভ্রমনের জন্য তাঁদের আমন্ত্রণপত্রও প্রেসিডেন্টের নিকট পৌঁছে দেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন ও সব ধরণের জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রের সমর্থনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত গভীরভাবে মুল্যায়ন করে থাকে।

এর আগে সকাল নয়টায় চিফ অফ প্রটোকল’এর প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্রদূত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের তাঁর বাসভবন থেকে নিরাপত্তা সহকারে হোয়াইট হাউসে নিয়ে যান। -বাসস

বঙ্গবন্ধু গড়েছেন বাংলাদেশকে আর রক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা: মোদী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশকে শেখ হাসিনাই রক্ষা করেছেন।

নয়া দিল্লি সফররত মাহমুদ আলী শুক্রবার বিকালে সাক্ষাৎ করতে গেলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মোদীকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধু। আর তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন।”

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ পরামর্শ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যোগ দিতে চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লি পৌঁছান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এক সুতোয় গাঁথা।”

মোদী ঠিক কোন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে বিজেপি ভারতে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে দূরত্বের যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল- ওই বক্তব্যেই তা নাকচ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে গত জুনে বাংলাদেশ সফরে এসে মোদীর পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজও একই বার্তা দিয়ে গেছেন।

মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে মোদী বলেন, “বাংলাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য সব কিছুই ভারত করবে।”

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিষেক অনুষ্ঠানে সার্কের সব রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েও মোদী বলেছিলেন- তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে চান।

শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুত খাতের সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলেও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরে মোদী বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এসব সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আরো বেশি বিনিয়োগ করা উচিৎ।

পর্যটনের মধ্য দিয়ে বন্ধুপ্রতীম এ দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়েও গুরুত্ব দেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

সমুদ্র ও নদীপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর সম্ভাবনা নিয়েও বৈঠকে কথা বলেন তিনি।
বিডি নিউজ